অভিজ্ঞ ক্লিনারদের ক্ষেত্রে কুয়েতে বেতন অনেকটাই ভিন্ন হয়ে থাকে, কারণ
তাদের দক্ষতা ও কাজের মান প্রতিষ্ঠানের চোখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
যারা কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন, কাজের নিয়ম-কানুন, মেশিন বা উপকরণ চালানো
জানেন, এবং অফিস বা বড় প্রতিষ্ঠানে পরিচিত হয়ে উঠেছেন-তারা তুলনামূলক ভালো
বেতন পান।
সাধারণত অভিজ্ঞ কর্মীদের বেতন ১৩০ থেকে ১৮০ কুয়েতি দিনার বা তারও বেশি হতে
পারে, বিশেষ করে যারা নির্ভরযোগ্য ও নিয়মিত পারফরম্যান্স দেখান। যাদের
কিছুটা আরবি বা ইংরেজি ভাষা বোঝার ও যোগাযোগ করার দক্ষতা আছে, তারা অফিস
ক্লিনার বা সুপারভাইজার লেভেলের কাজেও এগিয়ে যেতে পারেন, যেখানে বেতন আরও
ভালো হয়।
অভিজ্ঞদের ওভারটাইম, ইনসেনটিভ, এমনকি কিছু কোম্পানিতে বার্ষিক বোনাসও দেওয়া
হয়। এই কারণে অভিজ্ঞ ক্লিনারদের বিদেশে অনেক সময় নতুন কর্মীদের গাইড
হিসেবেও দেখা যায়। তাদের অবস্থান, সম্মান ও আর্থিক সুবিধা-সবদিক থেকেই
উন্নত থাকে, যদি তারা সৎভাবে ও পরিশ্রম করে চলতে পারেন।
-
অভিজ্ঞ ক্লিনারদের বেতন সাধারণত ১৩০–১৮০ কুয়েতি দিনার বা তার বেশি
-
টাকায় আনুমানিক ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত (রেট ভেদে ভিন্ন হতে
পারে)
-
সুপারভাইজার বা হেড ক্লিনার হিসেবে বেতন আরও বেশি হতে পারে
-
ভালো কাজে কোম্পানি ইনসেনটিভ বা বোনাস দেয়
-
অভিজ্ঞদের জন্য ওভারটাইম সুযোগ অনেক বেশি থাকে
-
যারা ভাষা বোঝেন বা লিখতে পারেন, তারা সহজেই পদোন্নতি পান
-
পুরোনো কর্মীদের উপর কোম্পানি অনেক সময় বেশি ভরসা করে
-
অভিজ্ঞ কর্মীরা নতুনদের প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পান
-
কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের জন্য স্পেশাল ছুটি বা বাসস্থান সুবিধা থাকে
-
অভিজ্ঞতা যত বেশি, বেতন ও সুযোগ তত ভালো
ওভারটাইম ও অতিরিক্ত ইনকামের সুযোগ আছে কি?
কুয়েতে ক্লিনারদের জন্য ওভারটাইম ও অতিরিক্ত ইনকামের সুযোগ অনেক
ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়, তবে তা নির্ভর করে কোন কোম্পানিতে কাজ করছেন, কাজের
চাপ কেমন এবং নিয়োগদাতার নীতি কী রকম। অনেক কোম্পানি নিয়মিত কর্মঘণ্টার
বাইরেও কাজ করানোর প্রয়োজন হলে কর্মীদের ওভারটাইম অফার করে, যেখানে প্রতি
ঘণ্টায় নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হয়।
সাধারণত প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজ হয়, এর বাইরে যে সময় কাজ করা হয়, তা
ওভারটাইম হিসেবে ধরা হয়। এই অতিরিক্ত সময়ের জন্য অনেকেই মাস শেষে ২০ থেকে
৩০ দিনার বাড়তি ইনকাম করতে পারেন, যা দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বড়
সহায়তা হয়ে দাঁড়ায়।তবে সব কোম্পানিই ওভারটাইম দেয় না, আবার কেউ কেউ কাজ
করিয়ে নেয় কিন্তু আলাদা করে টাকা দেয় না - এসব ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে
পড়তে হয়। তাই কুয়েতে কাজ করতে আসার আগে কন্ট্রাক্ট বা চুক্তিতে
ওভারটাইমের বিষয়টি পরিষ্কার করে লিখে রাখা খুব জরুরি।
অনেক সময় উৎসব, ছুটির আগে বা বড় কোনো প্রজেক্টের সময় অতিরিক্ত
কাজের সুযোগ তৈরি হয়। কেউ কেউ সপ্তাহে একদিনের ছুটি বাদ দিয়ে সেদিনও কাজ
করে বাড়তি আয় করেন।এই কারণে অনেক অভিজ্ঞ প্রবাসী বলেন, “ওভারটাইম করলে
মূল বেতনের চেয়েও বেশি ইনকাম করা সম্ভব।” তবে শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে
হয়, কারণ অতিরিক্ত কাজ মানেই বেশি চাপ। তাই ওভারটাইম করলেও সেটা নিজের
সামর্থ্য অনুযায়ী করা উচিত, নয়তো শরীরিক ক্ষতি হতে পারে।
বেতন ছাড়াও থাকা-খাওয়ার সুবিধা দেয় কি?
কুয়েতে যারা ক্লিনার হিসেবে কাজ করতে যান, তাদের অনেকেই প্রশ্ন
করেন-“বেতন তো একটা ঠিক আছে, কিন্তু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা কি কোম্পানি
দেয়?” বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ কোম্পানি বা নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান এই
সুবিধাগুলো দিয়ে থাকে, তবে সেটা নির্ভর করে চুক্তি এবং কোম্পানির নীতির
ওপর। সাধারণত যেসব কোম্পানি গণহারে কর্মী নিয়োগ দেয়, তারা কর্মীদের জন্য
ডরমিটরি বা ভাগাভাগি করে থাকার ব্যবস্থা রাখে।
এক রুমে চার-পাঁচজন একসাথে থাকেন, কখনো তা আরও বেশি জনেরও হতে
পারে।খাবারের দিক থেকে, কিছু কোম্পানি তিন বেলা খাবার দেয়-সাধারণত রুটি,
ভাত, সবজি, মাংস কিংবা মাঝে মাঝে ফলমূল। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান কেবল
দুপুরের বা রাতের খাবার দেয়, বাকিটা নিজ খরচে খেতে হয়। কারও কারও বেতন
কাঠামো এমনভাবে সাজানো থাকে যে খাবারের বদলে তারা “খাবার ভাতা” হিসেবে
কিছু টাকা পায়।
এক্ষেত্রে কর্মী নিজের মতো রান্না করে খেতে পারে। এছাড়া কিছু ভালো
মানের কোম্পানি কর্মীদের বাসস্থানেই বিদ্যুৎ, পানি ও ইন্টারনেট সুবিধা
দেয়, যা একজন প্রবাসীর জন্য অনেক বড় সাপোর্ট। তবে আবার এমন কোম্পানিও আছে
যারা এসব সুবিধা দেয় না বা বেতনের ভেতরে কেটে নেয়। তাই বিদেশে আসার আগে
চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে বুঝে নেওয়া খুব দরকার।
সব মিলিয়ে বলা যায়, থাকা-খাওয়ার সুবিধা অনেক সময় বেতনের চাইতেও বেশি
মূল্যবান হয়ে ওঠে, কারণ এতে খরচ কমে যায় এবং মাস শেষে দেশে টাকা পাঠানোর
পরিমাণ বাড়ে। তাই কোম্পানি কী দিচ্ছে আর কী দিচ্ছে না-তা আগেই
পরিষ্কারভাবে জানা উচিত।
ভবিষ্যতের সুযোগ ও উন্নতির সম্ভাবনা কতটা?
অনেকেই মনে করেন কুয়েতে ক্লিনার হিসেবে কাজ করলে হয়তো উন্নতির সুযোগ নেই,
কিন্তু বাস্তবতা ঠিক ততটা নেতিবাচক নয়। যারা সততা, ধৈর্য ও পরিশ্রমের
সঙ্গে কাজ করেন, তাদের জন্য ভবিষ্যতে উন্নতির দরজা ধীরে ধীরে খুলে যায়।
শুরুতে সাধারণ ক্লিনার হিসেবে কাজ করলেও সময়ের সাথে যদি আপনি
দায়িত্বশীলতা দেখাতে পারেন, সময়মতো কাজ করেন এবং অফিস বা সুপারভাইজারদের
আস্থাভাজন হয়ে উঠেন, তাহলে পদোন্নতি পাওয়া খুবই সম্ভব।
অনেক সময় অভিজ্ঞ কর্মীদের “হেড ক্লিনার” বা “সুপারভাইজার” পদে উন্নীত করা
হয়, যেখানে দায়িত্ব যেমন বাড়ে, তেমনি বেতনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে
বাড়ে।এছাড়া যারা ইংরেজি বা আরবি ভাষায় একটু বোঝে বা কথা বলতে পারে, তাদের
সুযোগ আরও বেশি থাকে। কারণ ভাষার মাধ্যমে অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়,
এবং সেই যোগ্যতা কাজে লাগে টিম লিডার বা অফিস সহকারী হিসেবেও কাজ করার
সুযোগে।
এমনও দেখা গেছে, কেউ কেউ এক কোম্পানিতে কয়েক বছর কাজ করে পরে অন্য ভালো
কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরি পেয়েছেন।তবে এটা ঠিক যে উন্নতি রাতারাতি হয়
না। প্রয়োজন হয় ধৈর্য, সময়, দক্ষতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-সৎভাবে নিজের
দায়িত্ব পালন করা। কিছু কোম্পানি বছরে একবার কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করে
ইনক্রিমেন্ট দেয় বা ভালো পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে নতুন দায়িত্ব দেয়।
সবশেষে বলা যায়, কুয়েতে ক্লিনার পেশা থেকে উন্নতির সম্ভাবনা একেবারে নেই
বলা ভুল হবে। যারা মন দিয়ে কাজ করেন, তারা ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি
করতে পারেন-এবং সেটাই এই পেশার ভেতরের সত্যি শক্তি।
FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃকুয়েতে ক্লিনার পদের শুরুতে বেতন কত হতে পারে?
উত্তরঃসাধারণত নতুনদের বেতন ৭০ থেকে ১২০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত হয়।
প্রশ্নঃঅভিজ্ঞ ক্লিনারদের বেতন কত হতে পারে?
উত্তরঃঅভিজ্ঞদের বেতন ১৩০ থেকে ১৮০ দিনার বা তারও বেশি হতে পারে।
প্রশ্নঃকুয়েতি দিনার বাংলাদেশি টাকায় কত হয়?
উত্তরঃএক দিনার প্রায় ৩৫০ টাকার মতো, তবে রেট বদলাতে পারে।
প্রশ্নঃক্লিনারদের কি ওভারটাইমে আয় বাড়ে?
উত্তরঃহ্যাঁ, ওভারটাইম করলে মাসিক আয় ২০-৩০ দিনার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
প্রশ্নঃবেতনের সঙ্গে থাকা-খাওয়ার সুবিধা কি দেয়?
উত্তরঃঅনেক কোম্পানি ফ্রি থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়।
প্রশ্নঃবেতন কি প্রতিমাসে নিয়মিত দেয়?
উত্তরঃভালো কোম্পানিগুলো সময়মতো বেতন দেয়, তবে কিছু কোম্পানিতে দেরি হয়।
প্রশ্নঃবেতন ছাড়াও কোনো ভাতা পাওয়া যায় কি?
উত্তরঃকেউ কেউ খাবার বা ট্রান্সপোর্ট ভাতা পায়, নির্ভর করে চুক্তির উপর।
প্রশ্নঃক্লিনারদের কি বেতন বাড়ে সময়ের সঙ্গে?
উত্তরঃহ্যাঁ, অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্স অনুযায়ী ধাপে ধাপে বাড়ে।
প্রশ্নঃছুটি কেটে কি বেতন কেটে নেয় কোম্পানি?
উত্তরঃহ্যাঁ, কোনো কোনো কোম্পানি অতিরিক্ত ছুটির জন্য বেতন কেটে নেয়।
প্রশ্নঃবেতন বাড়াতে কী করলে ভালো হয়?
উত্তরঃনিয়মিত ও সৎভাবে কাজ করলে পদোন্নতি ও বেতন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেখকের মন্তব্যঃকুয়েতে ক্লিনারের বেতন কত
কুয়েতে ক্লিনারের বেতন কত হিসেবে কাজ করা প্রবাসীদের জন্য একটা সম্মানজনক ও পরিশ্রমসাধ্য
পেশা। যদিও শুরুতে বেতন তুলনামূলক কম মনে হতে পারে, তবে ওভারটাইম,
ইনসেনটিভ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আয় ধীরে ধীরে বাড়ে। অনেকেই এই পেশা থেকে
জীবন গড়ার সুযোগ পান, যদি সৎভাবে ও ধৈর্য ধরে কাজ করেন। বেতন ছাড়া
থাকা-খাওয়ার সুবিধা অনেক সময় মাসিক খরচ কমিয়ে দেয়, যা বড় সাপোর্ট। সবশেষে
বলব, কুয়েতের ক্লিনার পেশাকে ছোট না দেখে, এটি একটি কঠিন বাস্তবতা ও
পরিশ্রমের প্রতীক হিসেবে দেখা উচিত।
প্রিয় পাঠক, আশা করি এ কন্টেনটি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে এবং এই
কনটেন্টের দ্বারা আপনারা উপকৃত হতে পারবেন ।যদি এই কন্টেন্টের দ্বারা
আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তবে এই কনটেন্টটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও
আত্মীয়-স্বজনের নিকট শেয়ার করতে পারেন যাতে তারা এটি পড়ে উপকৃত হতে
পারে। এছাড়াও প্রতিদিনের আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট
করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url