মাথা ব্যাথা কমানোর ১০টি উপায় জেনে নিন
মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি উপায় সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে আগ্রহী।মাথা ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যা প্রায় সকল মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অনুভব করে থাকেন। এটি নানা কারণে হতে পারে, যেমন দুশ্চিন্তা, ঘুমের ঘাটতি, পানি স্বল্পতা, চোখের চাপ, বা দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা।
কখনও কখনও মাথা ব্যথা অল্প সময়ের জন্য হলেও বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। ওষুধ খাওয়া ছাড়াও মাথা ব্যথা কমানোর বেশ কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় আছে, যেগুলি সহজেই অনুসরণ করে আরাম পাওয়া যায়।
মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি উপায়
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন:অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। ডিহাইড্রেশন মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা অনুভূত হয়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন। যদি বাইরে বেশি সময় থাকেন বা গরমে কাজ করেন, তবে আরও বেশি পানি পান করতে হবে। ঠান্ডা পানি নয়, হালকা কুসুম গরম পানি পান করলেও মাথা হালকা লাগে।
- ঘুমের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করুনঅপর্যাপ্ত ঘুম শুধু ক্লান্তি নয়, মাথা ব্যথার বড় কারণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। অস্থির বা ব্যস্ত জীবনযাপনের কারণে যদি ঘুম কমে যায়, তাহলে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় না এবং তার প্রভাব পড়ে মাথায়। নির্ধারিত সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও একটানা ভালো ঘুম নিশ্চিত করলেই অনেক সময় মাথা ব্যথা কমে যায়।চোখের
- আরাম নিশ্চিত করুন:দীর্ঘ সময় মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে চোখে চাপ পড়ে, যা সরাসরি মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। প্রতি ২০ মিনিট পরপর চোখ ঘোরানো, জানালার বাইরে তাকানো বা চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিশ্রাম নেওয়া খুবই কার্যকর হতে পারে। চোখের আরাম মানেই মাথার চাপ কমে যাওয়া।
- হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুন:শরীরে রক্ত চলাচল ঠিক থাকলে মাথা ব্যথা অনেকটা কমে যায়। দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার পর হালকা স্ট্রেচিং, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ অথবা সামান্য হাঁটাহাঁটি করলে শরীর চাঙ্গা লাগে। ঘরের বাইরে কিছুক্ষণ হেঁটে আসা, বিশেষ করে সকালে বা বিকেলে, মন ভালো করে এবং মাথা হালকা লাগে।
- ক্যাফেইন নিয়ন্ত্রণ করুন:চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন কখনো কখনো মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত খেলে উল্টো প্রভাব পড়তে পারে। যারা প্রতিদিন অনেক কাপ কফি খান, তারা হঠাৎ না খেলে মাথা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। তাই নিয়ম মেনে পরিমিত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে ব্যথা কমে, কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
- ঠান্ডা বা গরম সেঁক ব্যবহার করুন:মাথা ব্যথার ধরন অনুযায়ী ঠান্ডা বা গরম সেঁক বেশ উপকারী। যদি ব্যথা কপাল বা চোখের চারপাশে হয়, তবে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো তোয়ালে কপালে দিয়ে বসে থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যে আরাম পাওয়া যায়। আবার ঘাড় বা কাঁধে চাপজনিত ব্যথা হলে গরম পানির ব্যাগ দিয়ে সেঁক নিলে পেশির টান কমে যায়।
- তাজা বাতাসে কিছু সময় কাটান:সারা দিন যদি ঘরের ভিতরে থাকেন, তাহলে মাথা ভারী লাগতে পারে। তাজা বাতাসে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা বা শুধু জানালা খুলে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ে এবং মাথার ব্যথা হালকা হয়ে আসে। বিশেষ করে সবুজ গাছপালা বা খোলা প্রকৃতির মাঝে কিছু সময় কাটালে মানসিক প্রশান্তি মেলে।
- আরামদায়ক পরিবেশে বিশ্রাম নিন:চোখ বন্ধ করে একেবারে নীরব পরিবেশে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে মাথার ভার কমে আসে। অনেক সময় আলোর ঝলকানি, শব্দ বা অতিরিক্ত গরম পরিবেশ মাথা ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। তাই নরম আলো, শান্ত পরিবেশ ও হালকা ঘ্রাণযুক্ত রুমে শুয়ে থাকা অনেক উপকারী হতে পারে।
- চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন:মন এবং মাথা একে অপরের সাথে সংযুক্ত। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ থাকলে অনেক সময় তা সরাসরি মাথা ব্যথায় রূপ নেয়। প্রতিদিনের ছোট ছোট বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা এবং গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন:আদা চা, পুদিনা পাতার তেল, লেবুর রস ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান মাথা ব্যথা কমাতে কার্যকর। যেমন, এক চামচ আদা গুঁড়ো গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে অনেক সময় আরাম পাওয়া যায়। পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার তেল কপালে লাগালে শীতল অনুভূতি হয় এবং ব্যথা হালকা হয়।
পর্যাপ্ত পানি পান করে ডিহাইড্রেশন দূর করুন
নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
চোখের আরাম বজায় রাখুন ও স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করুন
বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমাদের অনেক সময়ই বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সামনে কাটাতে হয়-যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট কিংবা টিভি। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে থাকলে চোখে চাপ পড়ে এবং সেটি মাথা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্ক্রিন থেকে নির্গত আলো, বিশেষ করে ব্লু লাইট, চোখের মায়েশ্চারাইজিং গ্ল্যান্ডকে প্রভাবিত করে, যার ফলে চোখ শুষ্ক ও ক্লান্ত হয়ে যায়।
এর ফলেই চোখে জ্বালা, লালত্ব, জল আসা বা ঝাপসা দেখার সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী হলে মাথাব্যথা এবং চোখের চাপ বৃদ্ধি পায়। তাই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত বিরতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে, যার মানে হলো প্রতি ২০ মিনিট স্ক্রিন দেখার পর অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে কোনো কিছু দেখার চেষ্টা করা।
এছাড়া চোখের ব্যায়াম করা, যেমন চোখের চারপাশের পেশি ঝাঁকানো এবং চোখের গণ্ডির উপর হাত দিয়ে হালকা মালিশ দেওয়া চোখকে আরাম দেয়। স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে বা চোখের সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহার করাও সহায়ক। বিশেষ করে রাতে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার কমানো উচিত, কারণ অন্ধকারে স্ক্রিনের আলো চোখে বেশি ক্ষতি করে।
চোখের শুষ্কতা ও ক্লান্তি কমাতে নিয়মিত চোখ ধোয়া বা ভেজা তোয়ালে দিয়ে চোখ মোছাও কার্যকর। অনেক সময় দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে থাকলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, যা মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই চোখের আরাম বজায় রাখা শুধু চোখের জন্য নয়, পুরো শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করলে মাথা ব্যথা, চোখের অবসাদ এবং মানসিক চাপ কমে যায়, ফলে কাজের উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। তাই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করে চোখের সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটির মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বাড়ান
মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি উপায় শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। রক্ত সঠিকভাবে মস্তিষ্কে প্রবাহিত না হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না, যার ফলে মাথা ভারি লাগা এবং ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং হাঁটাহাঁটি খুব কার্যকরী। দীর্ঘ সময় ধরে একস্থানে বসে থাকার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং পেশিতে টান ধরে, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করলে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় এবং শরীর ও মস্তিষ্ক দুটোই চাঙ্গা থাকে। হাঁটার সময় শরীরের পেশি প্রসারিত হয়, যা চাপ কমায় এবং মাথার উপর জমে থাকা অস্বস্তি দূর করে। এছাড়া নিয়মিত স্ট্রেচিং এবং যোগব্যায়ামও মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্ককে আরও সতেজ করে তোলে।
আরো পড়ুনঃআপেলিন সিরাপ খেলে কি ক্ষতি হয়, খাওয়ার নিয়ম, রিভিউ জেনে নিন
বিশেষ করে যারা অফিসে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য মাঝেমধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হাঁটা খুবই উপকারী। এটি শুধু রক্ত সঞ্চালনই বাড়ায় না, মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে, যা মাথাব্যথার আরেকটি বড় কারণ। ব্যায়াম করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং রক্তে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে, যা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
অতএব, প্রতিদিনের জীবনে একটু সময় বের করে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়ামকে অভ্যাস করলে মাথাব্যথা দূর হয় এবং শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি মনের অবস্থা ও ভালো থাকে।
ক্যাফেইন গ্রহণে ভারসাম্য বজায় রাখুন
ঠান্ডা বা গরম সেঁক ব্যবহার করে ব্যথা উপশম করুন
তাজা বাতাসে সময় কাটান ও প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকুন
শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে বিশ্রাম নিন
মানসিক চাপ কমিয়ে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করুন মাথা ব্যথা কমাতে
মাথা ব্যথা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার একটি নিরাপদ ও কার্যকরী উপায়। অনেক সময় বাজারজাত ওষুধ ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তাই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো মাথা ব্যথা উপশমে স্বল্প পার্শ্বপ্রভাব সহায়ক। ঘরে সহজেই পাওয়া কিছু উপাদান যেমন আদা, তুলসী পাতা, মধু, এলাচ, এবং গরম পানি মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
উদাহরণস্বরূপ, আদা একটি প্রাকৃতিক প্রদাহবিরোধী উপাদান, যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কের পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। আদার রস বা আদা চা নিয়মিত খেলে মাথা ব্যথা অনেকটাই কমে। তুলসী পাতা স্নায়ুর উপর শান্তিদায়ক প্রভাব ফেলে এবং মাথার চাপ কমাতে সাহায্য করে। তুলসীর পাতা চা বানিয়ে খাওয়া বা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া খুবই উপকারী।
এছাড়া গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খাওয়া শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং রক্তে পুষ্টি যোগায়। মাথার পেছনে বা কপালে এলাচের তেল দিয়ে হালকা মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং মাথার ব্যথা কমে। ঘরোয়া এই উপাদানগুলো সহজলভ্য এবং প্রায়শই কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই কাজ করে। তবে মাথা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আরো পড়ুনঃডিসোপ্যান ১ ও 0.5 খেলে কি হয়, ডিসোপ্যান কি ঘুমের ওষুধ নাকি
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url