গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময় অনুভূতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হতে শুরু করে। এ সময় মায়ের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা অত্যন্ত জরুরী। গর্ভবতী মায়ের এই সময় স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
  গর্ভবতী মায়েদের এই সময় স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কি খাবার খাবে সেটিতে নজর দিতে
  হবে। নিজে প্রথম তিন মাসের জন্য একটি সাধারন খাবারের তালিকা দেওয়া হল। অবশ্য এটি
  ব্যাক্তি ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এক মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
  এক মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য খাবারের তালিকা তৈরি করতে হলে বুঝতে হবে এই
  সময়টিতে গর্ভে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়েতে বসে এবং ধীরে ধীরে ভুনের অঙ্গ পতঙ্গ
  গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সময় পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন এবং
  প্রোটিন প্রয়োজন, যদিও অতিরিক্ত ক্যালরি এখনই খুব বেশি দরকার হয় না।
  নিম্নে এক মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি আদর্শ খাবারের তালিকা দেওয়া হলঃ
- সকালের নাস্তা(সকাল৭ঃ৩০-৮ঃ৩০)-
 
- এক গ্লাস হালকা গরম দুধ(ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন)
 - একটি সিদ্ধ ডিম বা অমলেট
 - দুই টুকরো ব্রাউন ব্রেড বা একবাটি ওটস
 - চার থেকে পাঁচটি বাদাম(কাঠবাদাম, আখরোট, কিসমিস)
 
- মধ্য সকাল(সকাল১০ঃ৩০-১১ঃ৩০)
 
- একটি মৌসুমী ফল(কমলা, পেয়ারা, কলা)
 - এক গ্লাস লেবু পানি বা নারকেল পানি
 - দুপুরের খাবার(বেলা১ঃ০০-২ঃ০০)
 - এক কাপ ভাত বা দুইটা রুটি
 - এক বাটি ডাল(প্রোটিন ও আইরন)
 - শাকসবজি(পালং শাক, লাউ, কুমড়া)
 - মাছ/ডিম/চিকেন(প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি)
 - এক বাটি টক দই
 - সালাদ(শসা, গাজর, বিট)
 
- বিকালের নাস্তা(বিকেল৪ঃ০০-৫ঃ০০)
 
- এক কাপ দুধ/স্যুপ(সবজি বা চিকেন)
 - একটি কলা বা এক টুকরো হালকা পাউরুটি
 - দুইটি বিস্কুট বা মুড়ি
 
- রাতের খাবার(রাত৮ঃ০০-৯ঃ০০)
 
- এক থেকে দুইটি রুটি বা অল্প ভাত
 - হালকা ডাল বা সবজি
 - ডিমের কারি বা ছোট মাছ
 - এক বাটি দই
 - ঘুমানোর আগে রাত দশটায় এক গ্লাস হালকা গরম দুধ
 
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
    গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার এমন আছে যা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে
      পারে। এইসব খাবার গর্ভপাত, শিশুর জন্মগত ত্রুটি বা সংক্রমণের ঝুটি বাড়াতে
      পারে। তাই গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিম্নে নিষিদ্ধ বা এড়িয়ে চলার মত খাবার
      তালিকা দেওয়া হলো
  
  - কাঁচা বা আধা সিদ্ধ খাবারঃ গর্ভবতী মায়েদের এই সময় কাঁচা মাছ, আধা সিদ্ধ ডিম, অর্ধ সিদ্ধ মাংস(মুরগি, গরু, খাসি)। কারণ এগুলোতে সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া জাতীয় জীবাণু থাকতে পারে যা শিশুর ক্ষতি করতে পারে।
 - পাস্তুরাইজড না করা দুগ্ধজাত খাবারঃ কাঁচা দুধ গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও সফট চিজ যেমন ব্রি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ লিস্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা গর্ভপাত বা মৃত ভ্রুণের কারণ হতে পারে।
 - অ্যালকোহলঃ গর্ভবতী মায়েদের যেকোনো ধরনের এলকোহল জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। এই সময় যেকোনো ধরনের মদ্যপান নিষিদ্ধ। কারণ এর কারণে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
 - প্যাকেট জাত খাবার ও প্রসেস ফুডঃ গর্ভবতী মায়েদের এই সময় প্যাকেট জাত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে যেমন সসেস, সেলামি, চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস ইত্যাদি। কারণ এইগুলো খেলে শিশুর বিকাশে বাধা দিতে পারে কারণ এই খাবারগুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ ও প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে।
 - অতিরিক্ত ঝাল ও তেল যুক্ত খাবারঃ গর্ভবতী থাকাকালীন অতিরিক্ত তেল ঝাল মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। এই সময় ভাজাপোড়া, ট্রিট ফুট, পাকোড়া, সিঙ্গারা ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা কারণ এতে গর্ভবতী মায়ের গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি, হজমের সমস্যা এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
 - অতিরিক্ত মিষ্টি ও চিনি জাতীয় খাবারঃ গর্ভকালীন থাকা অবস্থায় মিষ্টি, কেক, মিষ্টি জাত সিরিয়াল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এটি হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি বাড়ায়
 - কোল্ড ড্রিংক ও কৃত্রিম মিষ্টি জাত পানীয়ঃ এই সময় সফট ড্রিংক, সোডা, ডায়েট কোক ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন, কৃত্রিম মিষ্টি, ফসফরিক অ্যাসিড ইত্যাদি যা মা ও শিশুর শরীরে ক্ষতি করতে পারে।
 
      আরো পড়ুনঃড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা 
    
    গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ
      গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনের সবচেয়ে সংবেদনশীল
      সময়। এই সময় সঠিক ওষুধ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল ওষুধ
      ব্রুনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সময় ডাক্তাররা কিছু প্রয়োজনীয় ও নিরাপদ
      ওষুধ দিয়ে থাকেন। নিম্নে গর্ভবতী মায়ের তিন মাসের ওষুধ সমূহ দেওয়া হলো
    
    - ফলিক এসিডঃ ফলিক এসিড মূলত শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য দেওয়া হয়। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ মাইক্রগ্রাম খেতে হবে। অবশ্যই এটি গর্ভধারণের আগেই শুরু করা ভালো এবং অন্তত ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত চলা উচিত।
 - আয়রনঃ আয়রন মূলত supplement আকারে দেওয়া হয় কারণ এতে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ ও শিশুর রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। অনেক সময় দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টারে শুরু করা হয়, তবে রক্তশূন্যতা থাকলে আগে থেকেই দেওয়া হয়। আয়রনের উৎস হলো ফেরাস সালফেট, ফেরাস ফুমারেট ইত্যাদি
 - ভিটামিন b6ঃ গর্ভবতী মায়েদের এই সময় ভিটামিন বি সিক্সের খুবই দরকার। কারণ এটি বমি ভাব ও মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত দিনে ১০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম খেতে হবে। তবে এটি মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া যাবে না তাহলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
 - মাল্টিভিটামিনঃ গর্ভবতী মায়ের এই সময় গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হল মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট। কারণ এই মাল্টিভিটামিন শরীরের ভিটামিন ও মিনারেল এর ঘাটতি পূরণ করে। এমন মাল্টিভিটামিন বেছে নিতে হবে যাতে ভিটামিন এ এর মাত্রা নিরাপদ সীমার মধ্যে থাকে(১০০০০IU-এর কম)
 
গর্ভবতী হবার প্রাথমিক লক্ষণ
      গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম দিকে(প্রথম থেকে চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে), শরীরের
        কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যা গর্ভধারণের প্রাথমিক
        লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। তবে এই লক্ষণ গুলোর প্রত্যেক নারী ক্ষেত্রে একরকম না
        হতে পারে। নিম্নে গর্ভবতী হবার প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেওয়া হলো-
    
    - যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত
 - মাথা ঘোরানো
 - চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা
 - বমি বমি লাগা
 - ক্লান্তি অনুভব করা
 - পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া
 - সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
 - পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মতো তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া
 - ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা
 - খাবারের অরুচি বা নতুন কোন খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা
 - মুখে অদ্ভুত স্বাদ পাওয়া
 - প্রখর ঘ্রাণ শক্তি বেড়ে যাওয়া
 
গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিডের প্রয়োজনীয়তা
        গর্ভাবস্থায় শিশুর সঠিক গঠনের জন্য ফলিক এসিডের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
          যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভোগেন তাদের জন্য জরুরিভাবে ফলিক
          অ্যাসিড প্রয়োজন। গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের যদি অ্যানিমিয়া থাকে তাহলে
          জন্মগত ত্রুটি সহ সন্তান জন্ম হতে পারে, বাচ্চা দুর্বল হতে পারে।
          অনেক সময় গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের বিভিন্ন রোগ ও সমস্যা দেখা দেয়
          যেমন অকালে সন্তান প্রসব এবং প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হয়। শরীরে
          প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে যাতে করে মা দূর্বল থাকতে পারে
          এবং রক্তশূন্যতা হতে পারে। গর্ব অবস্থায় মায়েদের খিচুনি হতে পারে।
          তাই গর্ব অবস্থায় ফলিক এসিড খেলে এনিমিয়া এবং খিচুনির হাত থেকে রক্ষা
          পাওয়া সম্ভব।
      
      
        ফলিক এসিড নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ করে। আবার ফলিক এসিড এই গুরুতর
          জন্ম ত্রুটি প্রতিরোধে ৭০ পার্সেন্টের বেশি কার্যকর। প্লাসেন্টার সঠিক
          গঠন ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে ফলিক এসিড গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের কোষ
          বিভাজন ও শক্তি উৎপাদনের জন্য ফলিক এসিড দরকার এতে করে মায়ের ক্লান্তি ও
          দুর্বলতা দূর হয়। গর্ভকালীন সময়ে ফলিক এসিডের সাপ্লিমেন্ট ছাড়াও ফলিক
          এসিড সমৃদ্ধ খাবার খেয়েও এর প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা যায় যেমন পালং শাক,
          মেথি শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদিতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ফলিক
          এসিড।
      
      
        আরো পড়ুনঃ
          সিজারের কতদিন পর দুধ খাওয়ানো যায়, জেনে নিন
      
      
        ফলিক এসিডের অভাবে কি হতে পারে 
      
      
        গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিডের অভাবে মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য মারাত্মক
          স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এই ভিটামিন বি নাইন শিশুর
          মস্তিষ্ক, আইন ও স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
          গর্ভাবস্থায় শুরুতেই যদি ফলিক এসিডের অভাব থাকে তাহলে বেশ কিছু জটিলতা
          দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্ক বা মেরুদন্ড সঠিকভাবে তৈরি
          হয় না কখনো কখনো, শরীরে যদি ফলিক এসিডের অভাব থাকে তাহলে এই সমস্যাগুলো
          দেখা যায়। আবার কখনো কখনো শিশুর মস্তিষ্ক আংশিক অনুপস্থিত হয় আর
          অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাচ্চা বাঁচে না।
      
      
        ফলিক এসিডের অভাবে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড বা কিডনির গঠনে সমস্যা হতে পারে।
          এছাড়াও চোখ, বা মুখমন্ডলের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে
          ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভকালীন হওয়ার আগেই সন্তান প্রসব হয়ে যেতে পারে।
          ফলিক এসিড না থাকলে শিশুর শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আবার মায়েদের
          ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা
          দিতে পারে। ফলিক এসিডের ঘাটতি থাকলে গর্ভের বাচ্চার বিকাশ ব্যাহত হয়ে
          গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলিক এসিডের অভাবে রক্ত চলাচলে সমস্যা হতে
          পারে যা শিশুর পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেয়।
      
      গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা
        গর্ভবতী মায়ের জন্য সুষম ও পুষ্টি কর খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
          গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর শুধু নিজের প্রয়োজন মেটায় না বরং গর্ভের শিশু
          বৃদ্ধির জন্য পুষ্টির যোগান দেয়। তাই প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন, খনিজ,
          প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার থাকা উচিত। নিম্নে গর্ভবতী মায়ের
          খাদ্য তালিকা দেওয়া হল-
      
      - সকালে ঘুম থেকে উঠে(৬ঃ৩০-৭ঃ৩০)
 
- এক গ্লাস গরম পানি
 - পাঁচ থেকে ছয়টি ভিজানো বাদাম
 - একটি খেজুর বা শুকনো ফল
 - সকালের নাস্তা(৮ঃ০০-৯ঃ০০)
 - এক কাপ দুধ বা সয়া দুধ
 - একটা ডিম সিদ্ধ/অমলেট
 - দুইটা রুটি বা দুধ-চিড়া/সুজি
 - একটি কলা/কমলা/সিজনাল ফল
 
- মধ্যসকালে(১১ঃ০০-১১ঃ৩০)
 
- একটি ফল(পেয়ারা/আপেল/পাকা পেঁপে/বেদানা)
 - এক গ্লাস নারকেল পানি বা ফলের রস চিনি ছাড়া
 
- দুপুরের খাবার(১ঃ০০-২ঃ০০)
 
- ভাত/রুটি
 - মাছ/মুরগি/ডাল
 - সবজি(শাক, লাউ, বাঁধাকপি ইত্যাদি)
 - এক টুকরো লেবু
 - সালাদ(টমেটো, শসা, গাজর)
 - এক কাপ দই প্রয়োজনে
 
- বিকালের নাস্তা(৫ঃ০০-৫ঃ৩০)
 
- এক গ্লাস দুধ বা মিল্কশেক
 - বিস্কুট বা মুড়ি বা মুড়ি-চানাচুর
 - সামান্য বাদাম বা চিড়া ভাজা
 - সেদ্ধ ছোলা বা সুজি খিচুড়ি
 
- রাতের খাবার(৮ঃ০০-৯ঃ০০)
 
- রুটি অথবা ভাত
 - হালকা সবজি
 - ডিম/ডাল/মুরগি
 - এক গ্লাস হালকা দুধ ঘুমের আগে
 
গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসের সর্তকতা
          গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাস হলো শিশুর পূর্ণ গঠন ও পরিপক্ক হওয়ার সময়। এই
          সময়টাতে গর্ভবতী মাকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে কারণ সামান্য অবহেলায়
          জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসের কিছু সর্তকতা
          সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো
        
        - শরীরের পরিবর্তন মেনে চলাঃ এই সময় শেষের তিন মাস পেট বড় হয়ে ভারী লাগে, পিঠে ব্যথা হয় এবং হাঁটাচালার কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক সেটা গর্ভবতী মায়েদের মেনে নিতে হবে। এই সময় দ্রুত ওজন বাড়বে সপ্তাহে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত। চাইলে এই সময় হালকা হাঁটাচলা সঠিক ভঙ্গিমায় ঘুমানো বা বসা এবং সাপোর্ট বেল্ট ব্যবহার করলে অনেকটাই আরাম বোধ করবে।
 - উচ্চ রক্তচাপ ও খিচুনির সতর্কতাঃ গর্ভাবস্থায় আরেকটি সতর্কতা হল উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে এবং খিচুনি হতে পারে। এই সময় গর্ভবতী মায়েদের যদি মাথা ব্যাথা, চোখ ঝাপসা এবং হাত-পা ফুলে যায় তাহলে সেটি বিপদজনক লক্ষণ। তাই দেরি না করে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভিজিট করতে হবে।
 - শিশু নড়াচড়া খেয়াল করাঃ দিনে অন্তত দশ বার শিশুর নড়াচড়া অনুভব করা উচিত। খেয়াল রাখবেন দুই ঘন্টায় নড়াচড়া না পেলে ডাক্তারের কাছে যাবেন।
 - রক্ত পড়া বা পানি ভাঙ্গাঃ গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসের আরেকটি সতর্কতা হলো এই সময় মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে যে যোনিপথ দিয়ে পানি ভাঙ্গা বা হালকা রক্তপাত দেখা দিচ্ছে কিনা, যদি দেখা দেয় তাহলে এটি প্রসবের ইঙ্গিত হতে পারে তাই অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে যান।
 - ঘন ঘন প্রস্রাব লাগা ও ইউরিন ইনফেকশনঃ মায়েদের ঘন ঘন প্রস্রাব লাগার প্রবণতা বেড়ে যায় কারো কারো ইউরিন ইনফেকশন হয় এজন্য তলপেট জ্বালা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। তাই এই সময় পানি বেশি খাবেন এবং পরিছন্নতা বজায় রাখবেন প্রয়োজনে ইউরিন পরীক্ষা করাবেন।
 - খাবারের সতর্কতাঃ এই সময় মায়েদের পেট ভারী ও গ্যাস সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা থাকে তাই অতিরিক্ত পেঁয়াজ, ভাজাপোড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বরং এই সময় আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খান। অল্প অল্প করে বারবার খাবার খেলে গ্যাস অম্বল কমে যাবে।
 
গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি উপাদান ও উৎস
          গর্ভবতী মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ
            এই সময়ে শরীরে মায়ের পাশাপাশি শিশুর বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত পুষ্টির
            প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন খাদ্যে সুসম পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন,
            ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, ওমেগা থ্রি, ফাইবার, ভিটামিন ইত্যাদি থাকতে
            হবে নিম্নে গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি উপাদান ও তার উৎসব সম্পর্কে তালিকা
            আকারে প্রকাশ করা হলোঃ
        
      | পুষ্টি উপাদান | গুরুত্ব | খাদ্য উৎস | 
|---|---|---|
| প্রোটিন | শিশুর কোষ,পেশি ও অঙ্গ গঠনে সহায়তা করে | ডিম,মাংস,মাছ,দুধ,ডাল,সয়া | 
| আয়রন | রক্তসল্পতা রোধ,শিশুর হেমগ্লবিন তৈরিতে সাহায্য করে | লাল শাক,কলিজা,খেজুর,কিশমিশ | 
| ক্যালসিয়াম | শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক | দুধ,দই,তেল,বাদাম | 
| ফলিক এসিড | কোষ বিভাজনে সাহায্য করে | শাক সব্জি,ডাল,কলা,কমলা,ব্রকলি | 
| ভিটামিন ডি | হাড় গঠনে সাহায্য করে | রোদ,ডিমের কুসুম,চর্বি যুক্ত মাছ | 
| ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড | শিশুর মস্তিস্ক ও চোখের বিকাশে সহায়ক | সামুদ্রিক মাছ,আখরোট,চিয়া সিড | 
| ফাইবার | কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে | দানাদার খাবার,ব্রাউন ব্রেড,ফল | 
| জিংক | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় | মাংস,ডাল,ডিম,বাদাম | 
| ম্যাগনেসিয়াম | নার্ভ ও পেশির কাজ ঠিক রাখে | তিল,কলা,বাদাম,ডাল | 
| ভিটামিন সি | আয়রনের শোষণ বাড়ায় | কমলা,লেবু,পেয়ারা,টমেটো | 
লেখক এর মন্তব্যঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাদ্য ও ঔষধ
  আজকের এই আর্টিকেলটিতে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাদ্য ও ওষুধ সম্পর্কে
    বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েরা এই সময় কি কি খাবার
    খাবেন এবং কি কি সর্তকতা অবলম্বন করবেন তা সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়েছে। আশা
    করি যারা গর্ভবতী মায়েরা রয়েছেন তারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়লে অনেকটাই
    উপকৃত হবেন। উপযুক্ত আলোচনার বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি অনেকটাই
    গর্ভকালীন সময়টি ভালোভাবে পার করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url