পানি ফলের গুনাগুন
পানিফল সম্পর্কে লিখতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি মনে আসে, তা হলো আমাদের
গ্রামবাংলার এই সহজলভ্য ফলটি আসলে কতটা উপকারী।অথচ আমরা তা অনেকেই জানি না। পথের
ধারে বা পুকুর-ডোবার কিনারে বেড়ে ওঠা পানিফল শুধু একটি ঋতুভিত্তিক নাস্তা নয়।
প্রাচীনকাল থেকেই লোকজ চিকিৎসায় পানিফল ব্যবহৃত হয়ে আসলেও আজও অনেকে এর প্রকৃত উপকারিতা সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না। তাই পানিফলের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যায়, এটি শুধু সুস্বাদুই নয়। আজকের আর্টিকেলটিতে পানি ফলের গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পানিফলের গুনাগুন
- পানিফলে প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। দীর্ঘক্ষণ পেট ভরেও রাখে।
- এতে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
- পানিফলে ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরকে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- এতে আয়রনের পরিমাণ ভালো, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- পানিফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং চুলকে শক্তিশালী করে।
- এটি একটি প্রাকৃতিক কুলিং খাদ্য; শরীরের অতিরিক্ত উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।
- এর প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ মূত্রনালীর সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- লো-ফ্যাট ও কম সোডিয়াম থাকার কারণে এটি হার্ট-ফ্রেন্ডলি খাবার।
- ক্যালোরি কম, ফাইবার বেশি, তাই ডায়েটের জন্য দারুণ একটি খাবার।
গর্ভাবস্থায় পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পানিফল খাওয়া অনেকভাবেই উপকারী হতে পারে, কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক,
পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার। পানিফলে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও প্রাকৃতিক স্টার্চ
মায়ের শরীরে শক্তি যোগায়, যা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা
করে। একই সঙ্গে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরেও রাখে, ফলে অকারণ খাবারের প্রবণতা কমে এবং
ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় পানি ফলের গুনাগুন জেনে তারপর খাওয়া
উচিত।
এই সময়ে একটি বড় সমস্যা হলো হজমের গণ্ডগোল ও কোষ্ঠকাঠিন্য। পানিফলের ফাইবার
হজমশক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া এর প্রাকৃতিক
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ পেটের অস্বস্তি ও ফোলাভাব কমাতে সহায়ক। অনেক সময়
গর্ভাবস্থায় অম্লতা বা গ্যাসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে, আর পানিফলের কুলিং
প্রভাব এসব উপসর্গ প্রশমনে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকা গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। পানিফলে
থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এতে আয়রনও থাকে, যা রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক এবং মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই
গুরুত্বপূর্ণ। ফলে নিয়মিত পরিমিত পানিফল গ্রহণ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
উন্নত হয় এবং রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমে।
এছাড়া পানিফল শরীরের অতিরিক্ত উষ্ণতা কমিয়ে প্রাকৃতিকভাবে শরীর ঠান্ডা রাখতে
সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় অনেক নারীকে স্বস্তি দেয়। তাছাড়া এতে কোনো
ক্ষতিকর ফ্যাট বা সোডিয়াম নেই, ফলে এটি হৃদযন্ত্রের জন্যও নিরাপদ একটি খাবার।
তবে গর্ভাবস্থায় যেভাবে সব খাবারই পরিমিত ও পরিষ্কারভাবে খেতে হয়, পানিফলও
তেমনই, ভালোভাবে ধুয়ে বা সেদ্ধ করে খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
পানি ফল খাওয়ার নিয়ম
- পানিফল খাওয়ার নিয়ম খুব বেশি জটিল নয়, তবে সঠিকভাবে খেলে এর উপকারিতা আরও বাড়ে এবং ক্ষতির ঝুঁকি কমে। নিচে সহজভাবে পানিফল খাওয়ার নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো—
- কাঁচা পানিফল সাধারণত পুকুর বা জলাশয়ে জন্মায়, তাই খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে বারবার ধুয়ে নিতে হবে। সম্ভব হলে লবণযুক্ত বা হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে আরও ভালো।
- কাঁচা খাওয়া গেলেও সেদ্ধ বা ভাপানো পানিফল হজমে আরও সহজ হয় এবং দূষণের সম্ভাবনাও কমে যায়। গর্ভবতী নারী, শিশু বা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত।
- একবারে খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। সাধারণত প্রতিবার ৫–৬টি বা প্রায় এক মুঠো পানিফল যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
- খোসা ছাড়ানোর পর দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখলে পানিফল শক্ত হয়ে যায় এবং স্বাদ কমে। তাই খোসা ছাড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব খেয়ে ফেলা ভালো।
- অনেকে পানিফল শুকিয়ে আটা তৈরি করে বা ভেজে নাস্তা হিসেবে খান। এগুলোও পুষ্টিকর, তবে ভাজা অবস্থায় খেলে ক্যালোরি সামান্য বাড়ে, ডায়েট করলে পরিমাণ কমিয়ে খেতে হবে।
- যাদের পেট সংবেদনশীল বা আগে পানিফলে এলার্জি হয়েছে, তাদের অল্প পরিমাণে খেতে হবে বা এড়িয়ে চলা উচিত।


অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url